শিরোনাম
ব্যাসায়ী সংগঠন ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশন এর পদবীকে আওয়ামী লীগের পদ বলে থানায় মামলা কেরানীগঞ্জে ভূমিদস্যু ও মাদক ব্যবসায়ী আসগরের ক্ষমতার পাহাড় চিলড্রেন ফাউন্ডেশন স্কুলের উদ্যোগে শুদ্ধ ইংরেজী বানান ও উচ্চারণ প্রতিযোগিতা টঙ্গীর মজিবুরের হাতে যেন আলাদিনের চেরাগ পবিত্র ওমরায় গেলেন বিএনপি নেতা এস এম জাহাঙ্গীর মানবসেবায় দিলীপ কুমার আগরওয়ালা প্রতারক এখন সাংবাদিক শিবিরকর্মী থেকে ‘বঙ্গবন্ধু গবেষক’ আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে চাঁদাবাজী!! ইনকিলাবের পক্ষে বিমানবন্দর মহাসড়কে দায়িত্বরত শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণ থানার কার্যক্রম শুরু করা খুবই প্রয়োজন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন
সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১২ অপরাহ্ন

৩ মেয়ে হারানো এক ফিলিস্তিনি বাবার আর্তনাদ- ‘আমাকে বাবা ডাকবে কে?’

রিপোটারের নাম / ৪৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন তার ১০৩ জন স্বজন। নিহত হয়েছেন তার স্ত্রীও। ইসরাইলি আগ্রাসন কেড়ে নিয়েছে তার তিন মেয়ে সন্তানের প্রাণও। সন্তানদের হারিয়ে ফিলিস্তিনি এই বাবার প্রশ্ন, কে তাকে বাবা বলে ডাকবে?

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর নিক্ষেপ করা বোমা আহমেদ আল-গুফেরির পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গাজা সিটিতে তাদের পরিবারের বাড়িতে ইসরাইলি হামলায় ১০৩ জন আত্মীয় নিহত হলেও আহমেদ ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) দূরে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেরিকো শহরে আটকা পড়েছিলেন। আর এতেই তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস যখন ইসরাইল আক্রমণ করে তখন আহমেদ তেল আবিবের একটি নির্মাণ সাইটে কাজ করছিলেন। সেই হামলার জেরে পরবর্তীতে সৃষ্ট যুদ্ধ এবং ইসরাইলের সামরিক অবরোধের কারণে তিনি তার স্ত্রী এবং তিন কন্যার কাছে ফিরে যেতে পারেননি।

তবে তিনি প্রতিদিন একই সময়ে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতেন। মূলত যখন ফোন সংযোগ চালুর অনুমতি দেওয়া হতো তখনই কথা বলতেন তিনি। আর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় হামলার সময় তিনি তার স্ত্রী শিরিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন।

আহমেদ আল-গুফেরি বলছেন, ‘সে (শিরিন) জানত যে, সে মারা যাবে। সে আমাকে বলেছিল, সে যদি আমার সঙ্গে খারাপ কিছু করে থাকে তাহলে তাকে যেন ক্ষমা করে দিই। আমি তাকে বলেছিলাম, এমন কথা বলার দরকার নেই। এবং এটিই ছিল আমাদের শেষবার ফোনে কথা বলা।’

সেই সন্ধ্যায় তার মামার বাড়িতে ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলায় আহমেদ আল-গুফেরি স্ত্রী এবং তার তিন কন্যা – তালা, লানা এবং নাজলা নিহত হয়। একইসঙ্গে সেই হামলায় আহমেদের মা, তার চার ভাই এবং তাদের পরিবার, সেইসাথে তার কয়েক ডজন খালা, চাচা এবং চাচাত ভাইও নিহত হয়। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা শতাধিক।

সেই হামলার পর দুই মাস পার হয়ে গেলেও ধ্বংসস্তূপের নিচে তাদের কয়েকজনের লাশ এখনো আটকে আছে।

বিবিসি বলছে, গত সপ্তাহে ছিল আহমেদের ছোট মেয়ের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে নাজলার বয়স এসময় দুই বছর হয়ে যেত। স্ত্রী-সন্তানদের চলে যাওয়ার পর দুই মাস পার হলেও আহমেদ এখনও বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি।

নিজের সন্তানদের মৃতদেহ হাতে ধরতে না পেরে বা তাদের সমাধিস্থ করতে না পারা আহমেদ এখনো এমন ভাবে কথা বলেন, যেন তারা বেঁচে আছেন। এসময় অশ্রুতে যেন তার চোখ-মুখ স্থির হয়ে যায়।

আহমেদ আল-গুফেরি বলছেন, ‘আমার মেয়েরা আমার কাছে ছোট পাখির মতো। আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নের মধ্যে আছি। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, আমাদের কী হয়েছে।’

তিনি তার ফোন এবং ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে মেয়েদের ছবি সরিয়ে দিয়েছেন, যাতে তাদের ছবি দেখে তিনি চমকে না ওঠেন। হামলায় বেঁচে থাকা কয়েকজন আত্মীয় এবং প্রতিবেশীর কাছ থেকে তিনি সেই দিনের ঘটনার বিবরণ পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

তারা তাকে বলেছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমে তার পরিবারের বাড়ির প্রবেশপথে আঘাত করে। তিনি বলেন, ‘এরপর তারা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পাশেই আমার মামার বাড়িতে গেল। পনের মিনিট পরে, ওই বাড়িতে বিমান হামলা হয়।’

এই বাড়িতেই বিমান হামলা চালিয়ে আহমদের পরিবারকে হত্যা করা হয়

গাজা শহরের জেইতুন এলাকায় সাহাবা মেডিকেল সেন্টারের কোনে চার তলা ভবনটিতে হামলা চালিয়ে ওই পরিবারটিকে হত্যা করা হয়েছিল। হামলার পর এখন সেটি কেবলই কংক্রিটের একটি ঢিবি আর ধুলোময় পোশাকের টুকরো দেখা যায়।

আহমেদের জীবিত আত্মীয়দের একজন হামিদ আল-গুফেরি। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, হামলা শুরু হওয়ার পর যারা পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিল, তারাই সেদিন বেঁচে গিয়েছিল। আর যারা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা নিহত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘হামলায় চারদিকে আগুন লেগে গিয়েছিল। আমাদের পাশের চারটি বাড়িতে হামলা হয়েছে। প্রতি ১০ মিনিটে তারা একটি করে বাড়িতে হামলা করছিল সেদিন। আমাদের সন্তান এবং আত্মীয়সহ গুফেরি পরিবারের ১১০ জন লোক সেখানে ছিল। তাদের মধ্যে গুটিকয়েক ব্যতীত সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।’

আহমেদ আল-গুফেরি বলেন, গাজায় আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। তার ভাষায়, ‘আমি কার জন্য ফিরে যাব? কে আমাকে বাবা বলে ডাকবে? কে আমাকে প্রিয়তম বলে ডাকবে? আমার স্ত্রী প্রায়ই আমাকে বলতেন, তার কাছে আমিই ছিলাম তার জীবন। এখন আমাকে কে এগুলো বলবে?’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ