সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরির জন্য শুদ্ধ পরিসংখ্যানের বিকল্প নেই। কেননা গোড়ায় যদি সমস্যা থাকে, তা হলে পুরো পরিকল্পনাটিই ভুল হবে। এ জন্য মাঠপর্যায় থেকে প্রকৃত চিত্র তুলে এনে নীতিনির্ধারকদের সামনে দিতে পারলেই টেকসই উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে। জাতীয় পরিসংখ্যান দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলে শুদ্ধ পরিসংখ্যানের তাগিদ দিয়েছেন। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে চতুর্থ জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রতি বছরের মতো দেশব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আয়োজনে এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহায়তায় কর্মসূচির মধ্যে ছিল র্যালি, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা এবং আলোচনাসভা।
দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘স্মার্ট পরিসংখ্যান, উন্নয়নের সোপান’। এ উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অঢিটরিয়ামে দিবসের মূল আলোচনাসভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের উপমহাপরিচালক পরিমল চন্দ্র বসু। বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মইনুল হক আনছারী, কৃষি উইংয়ের পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহাদাত হোসেন, কম্পিউটার উইংয়ের পরিচালক কবির উদ্দিন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং উইংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে পরিসংখ্যান আইন পাশ হয়। এ আইনের ভিত্তিতে দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থায় ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এই দিনটিকে স্মরণ করো রাখতে ২০২০ সালের ৮ জুন মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রতি বছর ২৭ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সঠিক পরিসংখ্যান টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এই গুরুত্ব বিবেচনা করেই ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রতিষ্ঠান করেন। তখন থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আমি মনে করি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও প্রকাশের মাধ্যমে বিবিএস স্মার্ট বাংলাদেশ ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠনে সরকারের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এবারের প্রতিপাদ্য— ‘স্মার্ট পরিসংখ্যান, উন্নয়নের সোপান’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেছেন, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এমডিজির লক্ষ্যসমূহ সফল বাস্তবায়নের পর এসডিজির লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য আমরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর এবং ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি অনেক উন্নত দেশের চেয়েও এগিয়ে। আমি মনে করি, উন্নত পরিসংখ্যান ব্যবস্থার সমন্বয়ে একটি সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান দিবস পালন এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা সময়ানুগ ও মানসম্পন্ন পরিসংখ্যান ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যকর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে চাই। এর মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নতসমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বির্নিমাণ করে বিশ্বদরবারে একটি স্মার্ট দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে সক্ষম হবে।