স্টাফ রিপোর্টার: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার(অ.দা.) অধ্যাপক ড.মোঃ মামুন অর রশিদের বিরুদ্ধে হত্যা,নারী কেলেঙ্কারীসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায় ১৯৯২ সালে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ১ম বর্ষে ভর্তি হন মামুন অর রশিদ।তিনি ১৯৯৩ সালে বাকৃবি ক্যাম্পাসে বাম রাজনৈতিক দলের অস্ত্রধারী ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতিতে জড়িয়ে পরেন।১৯৯৬ সালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই গ্রুপ ছাত্রের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উক্ত সংঘর্ষে কামাল ও রঞ্জিত নামে দুজন ছাত্র নিহত হয়।আলোচিত ছাত্র কামাল ও রঞ্জিত হত্যা মামলার অন্যতম আসামী এই পবিপ্রবি’র রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মামুন।এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কারণে মামুন বেশ কয়েক মাস কারাভোগ করেন।২০০১ সালে 10 লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন এর সহযোগীতায় উক্ত হত্যা মামলার চার্যশীট থেকে পুলিশ তার নাম বাদ দিলে তিনি মামলা থেকে মুক্তি পান।
২০০৩ সালে একাডেমিক রেজাল্ট খারাপ থাকা সত্বেও তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. একেএম আব্দুল হান্নান ভূইয়ার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিশাল,বাবুগঞ্জ এএনএসভিএম অনুষদে প্রভাষক পদে যোগ দেন।
আওয়ামীলীগের দোসর দুর্নীতিতে রেকর্ড গড়া সাবেক ভিসি অধ্যাপক হারুন অর রশিদের সাথে রেজিস্ট্রার মামুনের দহরম মহরম ছিল চোখে পরার মতো। তৎকালীন বরিশালের বাবুগঞ্জ আসনের এমপি এবং সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের আস্থাভাজন মামুন হওয়ায় তখন ভিসি হারুন এর অবৈধ নিয়োগ বানিজরে বৈধতার ব্যপারে মামুন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এজন্য তথকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদের নিয়োগের ১১ টি মামুন এর সুপারিশে হয়। এর বাদেও তখন মামুনকে ভিসি হারুন এএনএসভিএম অনুষদের ডিন,বেসিক সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রধান করেন। অধ্যাপক মামুন নারী লোলুপ, ভন্ড ও প্রতারক হিসাবে ক্যাম্পাসে সমধিক পরিচিত। মামুন অর রশিদ বেসিক সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক থাকাকালে উক্ত বিভাগের অফিস সহায়ক ডিভোর্সি সুন্দরী অন্তরা আক্তার হেপীর দিকে তার কু-নজর পড়ে। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে কু-প্রস্তাব দিয়ে উপহার-উপঢৌকনসহ লক্ষাধিক টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেন। তখন ডিভোর্স অবস্থায় থাকা হেপীও মানসিকভাবে ছিল বিপর্যস্ত তাই তার প্রস্তাবে সাড়া দেন। তখন মামুন-হ্যাপী এএনএসভিএম ক্যাম্পাসের মামুন এর অফিসে, বরিশাল শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে অসামাজিক কাজ করতে থাকেন।
তৎকালীন বেসিক সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোসাম্মৎ কুলসুম বেগম মামুন এর অফিসরুমে মামুন-হ্যাপী’র অসামাজিক কার্যকলাপ চলাকালে একদিন তাদেরকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। অধ্যাপক কুলসুম বেগম তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক মোঃ হারুন অর রশিদ ও অনুষদের ডিন অধ্যাপক রুহুল আমীন এর কাছে অভিযোগ করেন। এ ঘটনা তখন “টক অফ দ্যা ইউনিভার্সিটি” ছিল। তখন এহেন ঘটনার ১টা অডিও ক্লিপ ব্যাপক ভাইরাল হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হারুন ও হ্যাপীর খালাতো ভাইয়ের সহযোগীতায় হ্যাপীর সাথে মামুন ১০ লক্ষ টাকা কাবিনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ২ বছর ঘর সংসার করার পর প্রথম স্ত্রীর চাপে মামুন মোহরানার ১০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন।
২০১৮ সালে নারী খাদক মামুন অর রশিদ এবং তার বিশ্বস্থ বান্ধবী নওরোজ জাহান লিপি মিলে তৎকালীন ভিসি হারুন অর রশিদের মাধ্যমে এ্যানিমাল প্রোডাক্টস এন্ড বাই প্রোডাক্টস টেকনোলজি বিভাগের জান্নাতুল বারি, মেডিসিন, সার্জারি এন্ড অবস্টেট্রিক্স বিভাগের ডাঃ দিপা রানি পাল ও পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের মাহবুবা সুলতানাকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন। এ প্রতিটি নিয়োগে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা করে উৎকোচ গ্রহণ করেন এবং নিয়োগের পূর্বে এদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ আছে। এছাড়াও তিনি আরও ৮ জনকে ২০-৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন। মামুন এর এ অসামাজিক কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে সহযোগীতা করেন বলে একাধিক সূত্র জানায়।
পবিপ্রবি’র বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম এর সহপাঠী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার সুবাদে গত মাসে এই বিতর্কিত অধ্যাপক মামুন অর রশিদকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অ.দা.) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন।
রেজিস্ট্রার (অ.দা) পদে যোগদান করার পর থেকেই মামুন শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন এবং অধিকাংশ ফাইল ৩-৭দিন আটকে রাখেন। মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কু-প্রস্তাব দেন এবং কম্পিউটার অপারেটর কবির সিকদারকে বলেন তারা যেন তার সাথে যোগাযোগ করে।
সাবেক দুর্নীতি পরায়ন নারীলিপ্সু রেজিস্ট্রার কামরুল ইসলামের বেড পার্টনার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্সের ক্যাশ ফান্ড এন্ড পেনশন সেকশন এর শাখা কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সেকশন অফিসার মেহেদী হাসান সোহাগের বান্ধবী রেজিস্ট্রার শাখার সেকশন অফিসার আফরোজা খাতুন মুক্তা, সেকশন অফিসার ইসমা আক্তার ইপিসহ কয়েকজন নারী কর্মচারীকে কু-প্রস্তাব দেয় ও প্রায় অফিস শেষে ও লাঞ্চের বিরতিতে অফিসে আসতে বলে দাও ক্যাম্পাস পার্শবর্তী রেজিস্ট্রার অফিসের কম্পিউটার অপারেটর কবির সিকদার এর বাসায় যেতে বলে।
এ ব্যাপারে সাবেক প্রেমিকা ও স্ত্রী অন্তরা আক্তার হ্যাপীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমরা কোন অসামাজিক কাজে জড়িত ছিলাম না, আমরা শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি এবং ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেকই দেনমোহর পরিশোধ করে আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী জানান, মামুন অর রশিদের এ ঘটনা আমরা জানি। এ বিতর্কিত ও নারী কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত শিক্ষককে কেন ভিসি রেজিস্ট্রার হিসাবে নিযোগ দিল? এতে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ভিসির সুনাম ও ভাবমূর্তি অনেকাংশে ক্ষুন্ন হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং ২০ থেকে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একাধিক চৌকষ কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও এরকম একজন অনভিজ্ঞ ও দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে কেন ভিসি স্যার রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দিল তা আমাদের বোধগম্য নয়। তারা অবিলম্বে এই ভন্ড ও নারী লোলুপ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান। পবিপ্রবি’র শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি সূত্র জানিয়েছে রেজিস্ট্রার হিসাবে যোগদানের ১মাস যেতে না যেতেই তিনি ভিসিকে রেজিস্ট্রার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে উৎকোচ এর বিনিময়ে ১৮ জন মাস্টাররোল শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি পরায়ন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মামুন অর রশিদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ এর অনেক তথ্যই সঠিক নয়। ১৮ জন মাষ্টাররোল কর্মচারী নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে তার ভাষায় পদের নাম বদলা/ শ্রমিক বলে স্বীকার করেছেন ।
ভিসি অধ্যাপক ড.কাজী রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, আমি কখনো দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে আপোষ করিনি। মামুন অর রশিদ আমার সহপাঠী সত্য কিন্তু অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।