বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো তফাৎ নেই।
গয়েশ্বর বলেন, আবার তারাই বলে- আমি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) তো থাকতে চাই নাই; কিন্তু জনগণ আমাকে ছাড়ল না। আসলে এদের কোনো লাজ-লজ্জা নেই। এদের নৈতিকতা নেই।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
গয়েশ্বর বলেন, আমরা পাকিস্তানিদের বলেছিলাম- তোমাদের বৈষম্যের শাসন মানি না। বাঙালি তাদের ব্যালটের মাধ্যমে পাকিস্তান মুসলিম লীগ সরকারের ভরাডুবি দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের কাছে দিশারী, অসময়ের কান্ডারি। তার কথা যারা অস্বীকার করে তারা কাপুরুষ। অথবা স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের কোনো অবদান নেই। আওয়ামী লীগ আজকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরছে, নানা স্মৃতিচিহ্ন আবিষ্কারের দ্বারা।
গয়েশ্বর বলেন, যেখানে নির্যাতন নিপীড়ন করে যেই পাকিস্তানের রক্ষা হয়নি। এই আওয়ামী লীগ সরকারও পারবে না। আজকে যেখানে রাষ্ট্রীয় সম্পদ যাদের রক্ষা করার কথা। তারাই তো লুট করে দেউলিয়া করেছে। কর্মসংস্থান নেই। দেশে হাজার হাজার বেকার। দেশ কোন দিকে যাচ্ছে? এজন্য তো মুক্তিযুদ্ধ হয় নাই।
গয়েশ্বর বলেন, কারাগারে নেওয়ার পর তো নেতাকর্মীদের থেকে টাকা নিয়ে বাণিজ্য করে। জামিনের পরও মুক্তি নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হয়। আসলে অত্যাচারের শেষ কোথায়?
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়নে যা করেছেন, তা বলে শেষ হবে না। তিনি দেশের কৃষির উন্নয়নে খাল খনন কর্মসূচি করেছেন। শিক্ষার উন্নয়নে অসংখ্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলে যে নির্বাচন হয়েছিল সেখানে সব দল অংশ নিয়েছিল।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সেটি আজ ভূলুণ্ঠিত। এই সরকার ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আমরা এই দুইটি ফিরিয়ে আনার আন্দোলন করছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের সব অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সেইসঙ্গে একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করা হয়েছিল। সেই আন্দোলন আমাদেরকে আজও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জোগায়। সেদিন পাকিস্তানিদের অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্রসমাজসহ সাধারণ মানুষ বিদ্রোহ করেছিল।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, এ দেশের মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমেই তাদের দাবি আদায় করেছিল। তার উদাহরণ ১৯৫২ সালের মাতৃভাষা আন্দোলন। সে সময় বাঙালি জাতি পশ্চিম পাকিস্তানের অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই সংগ্রাম করেছে। আজকে আমরা এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। লড়াই হচ্ছে সহজাত প্রবৃত্তি। দেশের মানুষ আজ অসহায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ছাত্র-যুবক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সংগঠনের নেতারা।
উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জেড মোর্তুজা চৌধুরী তুলা, অঙ্গ সংগঠনের হেলেন জেরিন খান, আব্দুর রহিম, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, শাহ মো. নেছারুল হক, ছাত্রনেতা সালেহ মোহাম্মদ আদনানসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী।