বিশ্বব্যাপী অপরাধমূলক বিচার পর্যবেক্ষণ এবং অন্যায়ভাবে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা ক্লুনি ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিসের উদ্যোগ ট্রায়াল ওয়াচ। গতকাল শুক্রবার তারা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা ও দোষী সাব্যস্ত করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
‘বাংলাদেশ ভার্সেস মুহাম্মদ ইউনূস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ট্রায়াল ওয়াচ বলছে, তৃতীয় শ্রম আদালতের রায় নিয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে কাজ করার পর তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। এতে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ড. ইউনূস ও তার সঙ্গে অন্য তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা বাতিলের আহ্বান জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারপ্রক্রিয়া পর্যালোচনার ভিত্তিতে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়ার অপব্যবহার খুঁজে পাওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ দেখা গেছে। এতে দেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে যে দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে তা বাতিল করতে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
ক্লুনি ফাউন্ডেশনের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ড. ইউনূসের সমর্থকরা বলছেন, এই মামলাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনের তাকে অসম্মান ও হেয় প্রতিপন্ন করার নিরলস প্রচারণার অংশ। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে ড. ইউনূস ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ড. ইউনূসের কট্টর সমালোচনা করে ‘দরিদ্রদের রক্তচোষা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং একটি অনুষ্ঠানে তাকে ‘পদ্মা নদীতে চুবানোর’ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক; কারণ ২০২৪ সালের জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের আগে সমালোচকদের সরকারের ক্রমবর্ধমান দমনপীড়ন, বিরোধী নেতাদের ব্যাপক গ্রেফতারের খবরে ‘সিভিকাস মনিটর’ বাংলাদেশের নাগরিক পরিসরকে সবচেয়ে কম রেটিং দেয়।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনসহ শত শত বিশ্ব নেতা ও নোবেল জয়ী দুটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। যেখানে তারা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মামলাগুলোকে ‘ধারাবাহিক বিচারিক হয়রানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়, অভিযোগ গঠনের সাত মাসেরও কম সময়ের মধ্যে গত ১ জানুয়ারি অধ্যাপক ইউনূসকে দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়। তার এক সপ্তাহ পর ‘বিতর্কিত’ জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন। ৯০ এর দশকে দরিদ্রদের হাতে সেলফোন তুলে দিতে এবং তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ড. ইউনূস গ্রামীণ টেলিকম নামে যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন সেখান থেকেই শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী ক্ষমতাহীন চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ড. ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের আট সদস্যের মধ্যে তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। চার জনই গত ২৮ জানুয়ারি তাদের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন এবং ৩ মার্চ শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ফাইল তলব করে। ড. ইউনূস ও অন্য তিন জন এখন জামিনে আছেন।
এদিকে আগামী ৩ মার্চ ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকম বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলার শুনানির দিন ধার্য আছে।
ট্রায়াল ওয়াচের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া যে জটিল রাজনৈতিক পরিবেশে হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে আনা আরও অনেক মামলা, ইউনূস সম্পর্কে শেখ হাসিনার বিবৃতি, বিচার প্রক্রিয়ার দ্রুত প্রকৃতির মতো কয়েকটি কারণের ভিত্তিতে অযৌক্তিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল বলে মনে হয়। গ্রামীণ টেলিকমের আরও অনেকের মধ্যে ইউনূসকে বাছাই করে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা, শ্রম কর্তৃপক্ষের অস্বাভাবিক আক্রমণাত্মক এবং সম্ভাব্য অপ্রত্যাশিত ব্যাখ্যা এবং পদ্ধতিগত অনিয়ম রয়েছে।
ট্রায়াল ওয়াচ বাংলাদেশের শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রতি ইউনূস ও তার সহঅভিযুক্তদের দণ্ড বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে আপিল কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ট্রায়াল ওয়াচ তার প্রতিবেদন আপডেট করবে বলে জানানো হয়।