প্রায় ৫ বিঘা জমি নিয়ে বিরোধের জেরে জয়পুরহাটের কালাইয়ে অসহায় বৃদ্ধ আফতাব আলীর পাকা সরিষা ক্ষেত কাটতে দিচ্ছে না প্রভাবশালীরা। জমিতেই নষ্ট হচ্ছে অসহায় বৃদ্ধ কৃষকের পাকা সরিষা!
পাকা সরিষা কাটার জন্য বৃদ্ধ আফতাব আলী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুরলেও কোনো সুরাহা না পেয়ে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে তার খেতের পাকা সরিষা। একইসঙ্গে আতঙ্কে জীবনযাপন করছেন তিনি।
মঙ্গলবার উপজেলার বানিহারা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পাকা সরিষা গাছ বিবর্ণ রং ধারণ করে সরিষা ঝরে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। জমির মালিক বৃদ্ধ আফতাব আলী প্রভাবশালীদের বাঁধার কারণে ফসল কাটতে পারছেন না। কাটতে গেলেই প্রভাবশালীরা জমিতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন এবং বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
গ্রামবাসী, জমির মালিক ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের বানিহারা গ্রামের বৃদ্ধ আফতাব আলী মণ্ডল প্রায় পঞ্চাশ বছর থেকে পাঁচ বিঘা জমি নিজ দখলে রেখে চাষাবাদ করে আসছেন। হঠাৎ করে সেই জমি একই গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের, তার ভাই আতাউর রহমান ও আশরাফ মিলে নিজেদের দাবি করেন। তারা ওই জমিগুলোতে বৃদ্ধের ফলানো পাকা সরিষা ক্ষেত কাটতে দিচ্ছেন না। ফলে সরিষা পেকে জমিতেই ঝরে যাচ্ছে।
বৃদ্ধের কৃষি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জমিতে ফসল কাটতে গেলেই প্রতিপক্ষরা বাঁধা দিচ্ছে। এর আগে সরিষা রোপণের সময় বৃদ্ধের একমাত্র ছেলে আব্দুল আলিমকে প্রভাবশালীরা মারপিটও করেছে।
বৃদ্ধ আফতাব আলীর অভিযোগ, জমির দলিলপত্র সঠিক থাকার পরও কেন প্রতিপক্ষরা আমাকে এত নির্যাতন করছেন। তারা পাকা খেত কাটতে গেলে বাধা প্রদান করছেন। জমি যদি তাদেরই হয়, তাহলে আদালত রয়েছে, তারা জমি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। আদালত যে রায় দিবেন তা আমি মাথা পেতে মেনে নিব।
বানিহারা গ্রামের বাসিন্দা মাহফুজার রহমান বলেন, আফতাব আলী দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিগুলোতে চাষাবাদ করছে। হঠাৎ করে আবু তাহের ও তার ভাইয়েরা এই জমিগুলো তাদের বলে দাবি করছে। গ্রামে সালিশও বসেছিল। জমিতে মারামারিও হয়েছে।
আরেক বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, দলিলপত্রে জমির মালিক আফতাব আলী। দখলেও তিনি। কেন যে তারা জমির ফসল কাটতে দিচ্ছে না তা বোঝা যাচ্ছে না।
পার্শ্ববর্তী কুসুমসাড়া গ্রামের আল আমিন জানান, ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আফতাব আলী মণ্ডল এবং তার ছেলেরা ও জমি চাষাবাদ করছেন।
প্রভাবশালী আবু তাহের বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আফতাব আলী এই জমিগুলো জোর করে নিজ নামে খতিয়ানভুক্ত করে নিয়েছেন। খতিয়ান সংশোধনের মামলাও করেছি। উকিল বলেছে জমিগুলো দখলে নিতে হবে, তাই জমি দখলে নিতে ফসল কাটতে দিচ্ছি না; যা করার সে করতে পারে কিন্তু দখল ছাড়ব না। প্রয়োজনে জমিতে রক্তের বন্যা বয়ে দেওয়া হবে।
আহম্মেদাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, আমার পরিষদে এ নিয়ে সালিশও হয়েছে। আফতাব আলীর নামে জমির সব কাগজপত্র সঠিক রয়েছে। আমি তাদের নিষেধও করেছি। খতিয়ান সংশোধন ও মারপিটের ঘটনায় মামলাও চলমান রয়েছে।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারি বলেন, ফসল নষ্টের বিষয়ে মৌখিকভাবে শুনেছি, তবে এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।