ভারতের ন্যাশনাল স্টাটিসটিক্যাল কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. রাধা বিনোদ বর্মণ বলেছেন, গণতন্ত্র রক্ষা করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র পরিসংখ্যান। কেননা এই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ জানতে পারে সরকার তাদের জন্য কি করছে, পাশাপাশি বেসরকারি খাত কি করছে। তাই এই তথ্যগুলো ভুল করা যাবে না। সঠিক তথ্যের জন্য একটি স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন দরকার। এটি থাকলে সরকার তার মতো করে আর্থিক কোনো সূচকের তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। সেমিনারে স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন এবং পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় গঠনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
সেমিনারে ‘চেঞ্জিং হরাইজন অব ইকোনমিক অ্যানালাইসিস : এ প্যাথ ফর নলেজ ইকোনমি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. রাধা বিনোদ বর্মণ।
মূল প্রবন্ধে ড. রাধা বিনোদ বলেন, বাংলাদেশের অনেক তথ্য আছে। কিন্তু সেগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ফলে অনেক সময় এগুলোর সঠিক ব্যবহার করা যায় না। বিগ ডাটা সেন্টারে সব তথ্য এক জায়গায় থাকলে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে তথ্যের মান নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মানসম্মত তথ্য ছাড়া কোনো পরিকল্পনাই সঠিকভাবে কাজে আসবে না।
পাশাপাশি খাতভিত্তিক বিভিন্ন তথ্যের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। এখন ডিজিটাল যুগ। তাই বিভিন্ন খাতের তথ্য আছে। সেগুলো নিয়ে অ্যানালাইসিস করতে হবে। যেমন জমির রেজিস্ট্রেশনের তথ্য, ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্যসহ নানা খাতভিত্তিক তথ্য আছে ঠিকই। সেগুলো এক জায়গায় এনে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে মানুষের অবস্থা কি। তাদের কার জন্য কি ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। এখন দেখা যায় তথ্যের অভাবে অনেকেই সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না।
আবার অনেকেই বেশি পাচ্ছেন। কেউ কেউ কম পাচ্ছেন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সঠিক তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সরকার যেসব পরিকল্পনা করে এবং এর পেছনে যে ধরনের ডাটা ব্যবহার করে সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। কেননা এতে দেখতে হবে সাধারণ মানুষের জন্য যেসব পরিকল্পনা করা হলো তার প্রভাব কি? কিভাবে সাধারণ জনগণ উপকৃত হলো বা আদৌ কিছু হলো কিনা।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, তথ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে স্বাধীন কমিশন গঠন করা দরকার। এটি যে ভারতের মতো হতে হবে সেটি নয়। আমরা যেখানে ভালো কিছু পাব সেটাকে গ্রহণ করব। তবে কাউন্সিল গঠন করা হলেও সেটি এখনো কার্যকর নয়। আমাদের খাতভিত্তিক অনেক তথ্যই আছে। কিন্তু সেগুলো হালনাগাদ নয়। পাশাপাশি ইন্টার সেক্টরাল কো অর্ডিনেশন দরকার। বিগডাটা বা ডাটা ওয়্যার হাউজ সিস্টেমে যেতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন।
শুধু এককেন্দ্রিক পরিসংখ্যান সংস্থার ওপর সবকিছু চাপিয়ে দিলে হবে না। তবে ভারতে যেমন পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় এবং একজন মন্ত্রী আছেন তেমনি বাংলাদেশেও এটা করা যেতে পারে।