ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, কৃষিজমি শুধু শস্য উৎপাদন ক্ষেত্রই নয়, কৃষিজমি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ এবং আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি।
বৃহস্পতিবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন-২০২৪ (খসড়া) চূড়ান্তকরণ বিষয়ক এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতিত্ব করার সময় ভূমিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এ সময় ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান একেএম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. খলিলুর রহমান খসড়া আইনটি উপস্থাপন করেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়নের দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের জন্য ভূমির মতো এই অমূল্য সম্পদ রক্ষার জন্য শক্তিশালী আইন প্রণয়ন করা জরুরি বলে মনে করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য তার নির্দেশনায় ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন-২০২৪ আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ আইন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং দীর্ঘমেয়াদি ব-দ্বীপ পরিকল্পনার সহজতর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন-২০২৪ আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, আবাসন, বাড়ি-ঘর তৈরি, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, শিল্প-কারখানা ও রাস্তাঘাট নির্মাণরোধ করা; ভূমির শ্রেণি বা প্রকৃতি ধরে রেখে পরিবেশ রক্ষা ও খাদ্য শস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা; কৃষিজমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড়, নদী, খালবিল ও জলাশয় সুরক্ষাসহ ভূমির পরিকল্পিত ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা; এবং ভূমির ব্যবহার নিশ্চিত করে পরিকল্পিত জোনিংয়ের মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহারে রাষ্ট্রীয় অনুশাসন নিশ্চিত করা।
টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং ভূমি সম্পদের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের অবিচল অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। এসময় উপস্থিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা এক যুগান্তকারী আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি। উন্মুক্ত মতামতের ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিক খসড়ায় ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় হালনাগাদ করা হয়েছে।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, যেহেতু আইনটি প্রণয়ন হলে প্রায় সব সেক্টরে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, আমরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মূল্যবান মতামত আহ্বান করছি। আমি আশা করছি সবার প্রাপ্ত মতামতের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত আইনের খসড়াটি কৃষি সমৃদ্ধিকে উৎসাহিত, খাদ্য সুরক্ষা জোরদার এবং আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষিত করায় ভূমিকা রাখবে- মন্ত্রী যোগ করেন।
ভূমিসচিব জানান, এ আইনের মূল বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, ভূসংস্থান এবং উদ্দিষ্ট ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে জমিকে স্বতন্ত্র অঞ্চলে নিখুঁতভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্থল মূল্যায়নের মাধ্যমে, সরকার ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ তৈরি করছে, যা সারা দেশে পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য একটি স্পষ্ট প্রতিচিত্র প্রদান করবে। ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ তৈরি সংশ্লিষ্ট ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় চলমান প্রকল্পটির নাম ‘মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প’।
এ সময় সচিব জানান, বিশেষজ্ঞসহ সবার মতামতের ওপর ভিত্তি করে আইনের খসড়ায় ভূমি জোনিংয়ের জন্য ১০টি শ্রেণিবিন্যাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- আবাদি, আবাসিক, বাণিজ্যিক, জলাভূমি, নদী, বন, পাহাড়, রাস্তা, শিল্প এবং ধর্মীয় স্থান।
এ সময় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সব বিষয় বিবেচনা করে এবং প্রস্তাবিত আইনের মৌলিক স্পিরিটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ মাসের মধ্যেই ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন-২০২৪ (খসড়া)-এর ওপর চূড়ান্ত মতামত লিখিতভাবে প্রেরণের অনুরোধ জানান ভূমি সচিব।
সভায় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ভূমি জোনিং প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাবেক সিনিয়র সচিব দিলওয়ার বখত, ল্যান্ড পলিসি স্পেশালিষ্ট সাবেক গ্রেড-১ কর্মকর্তা মো. হান্নান মিয়াসহ ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাভুক্ত দপ্তর/সংস্থা ও প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ ২২টির অধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।