বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জন্মের পূর্ব থেকেই অনেক জ্ঞানী -গুণী, বিজ্ঞানী, কবি- সাহিত্যিক, উপন্যাসিক, জন্ম দিলেও রাজনীতিবিদ হিসেবে সামান্যই গুণী মানুষের জন্ম দিতে পেরেছে। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-জনতার কথা বারবার উচ্চারন করেছেন। সাধারন মানুষের অধিকারের জন্য সারা জীবন মানুষকে সংগ্রামী এবং লড়াই করতে শিখিয়েছেন; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার জীবনের সর্বোচ্চ দিয়ে একটা নির্দিষ্ট মানচিত্র দিয়েছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বুকের তাজা রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত এদেশকে পুনর্গঠন করে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গঠন করার চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে দেশের প্রতিটি প্রয়োজনের মুহূর্তে সব সময় বাতিঘর হিসেবে আবির্ভূত , পাঞ্জেরীর ভুমিকা রাখা নেতা একজনই। যিনি ১৯৭১ এ মহান স্বাধীনতার সংগ্রামের অগ্রণী সৈনিক, হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহকারী এবং যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রথম খেতাবধারী ড. কর্নেল ( অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে তিনিই কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন। মহান স্বাধীনতা ঘোষণার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী। তিনি ১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক ঘটনার পর বিভ্রান্ত-দিকভ্রান্ত জাতিকে পুনর্গঠন করেছিলেন, বিদ্রোহী সেনাবাহিনীকে শান্ত ও পুনর্গঠনে ভূমিকা রেখেছেন । যুদ্ধবিদ্ধস্ত জাতীকে পুনর্গঠনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে একটি জাতীয়তাবাদী শক্তি প্রতিষ্ঠায় নেপথ্যের মূল ভুমিকা রাখেন। ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হাওয়ার জন্য ১৩ বছর চাকুরি থাকা অবস্থায় চাকুরী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন।সামরিক গোপন প্রতিবেদনে (এসিআর) লেঃ জেনারেল মীর শওকত আলী বীরউত্তম লিখেছেন ” Is an Assets for Bangladesh Army”. ১৯৭৯ সালে বিএনপি নামটিও ড. কর্নেল অলির দেওয়া। তিনি শুধু মূলসংগঠণ নয়,তার তত্বাবধানে অংগসংগঠন গুলিও তিনি গঠন করেছেন বিশেষ করে ছাত্রদল,যুবদল ও শ্রমিকদল।
১৯৮১ সালে শোকাস্তব্ধ পুরো জাতীকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করেছেন। হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসন আমলে সকল লোভ লালসার উর্দ্ধে উঠে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখেন। এরশাদের ক্ষমতার শেষ দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতাদের নিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করেন এবং ঐদিনই এরশাদ পদত্যাগ করেন।
১৯৯১ সালে প্রলয়নকারী ঘুর্নিঝড়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় এক লাখ বিশ হাজার নিহত হয়েছিল। প্রায় ৫০% ঘর-বাড়ি লন্ডভন্ড
হয়।মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ, পানি খাবার ছিল না তদ্বপুরি মৃতদেহ দাফন করার লোক ছিল না। ঐ দূর্যোগ মূহুর্তে এক কাপড়ে ড. কর্নেল অলি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে চট্টগ্রাম পরিত্যক্ত সার্কেট হাউজ খুলে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পূর্ণবাসনে হাত দেন। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরে ঘরে খাবার,পানি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। শহরাঞ্চলসহ সকল জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেন। তিনি আনসার এবং পুলিশদেরকে নিয়ে মৃত দেহের দাফনের ব্যবস্থা করেন। প্রথম ৭ দিন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে সম্পন্ন করে।
তিনি ১৯৯৩-৯৪ সালে মায়ানমারের সাথে আলাপ আলোচনা করে রোহিঙ্গা স্বরনার্থীদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ১৯৯০ সালের পূর্ব থেকে বিপথগামী কিছু চাকমা স্বশস্ত্র গ্রুপ ভারতের অভ্যান্তরে সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কোন চুক্তি ছাড়াই প্রায় এক হাজর চাকমা প্রতাবর্তন করার ব্যবস্থা গ্রহন করেন কর্নেল অলি।প্রকৃতপক্ষে ১৯৯৩ সালে তার প্রচেষ্ঠায় পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি শৃঙ্খলার ভীত রচনা হয়।
৯৬ এর ঐতিহাসিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ভূমিকা রেখেছেন। দেশের জন্য, জনগণের জন্য তার আত্মত্যাগ অপরিসীম। ১৯৯৬ সালে প্রথমার্ধে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। অনুরূপভাবে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য তাকে দুইটা আসন থেকে এমপি মনোনীত করার জন্য প্রস্তাব, বিরাট অংকের টাকা এবং মন্ত্রী দেওয়ার লোভ লালসা দেয়া হয়েছিল তা তিনি গ্রহণ করেননি।
দশকের পর দশক ধরে জাতির প্রয়োজনে এমন বৈচিত্র্যময়, ব্যক্তিত্বপূর্ণ, নেতৃত্ব প্রদানকারী দ্বিতীয় ব্যক্তি বিরল।“জাতীয় সরকারের” গঠনের জন্য প্রথম রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ড. কর্নেল অলি আহমদ, বীর বিক্রম গঠন করেন জাতীয় মুক্তিমঞ্চ। তিনি ২০১২ সাল থেকে বিএনপির সাথে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।২০ দলীয় জোট বিলুপ্তের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের বৃহৎ স্বার্থে সকল বিরোধী দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে সাহসী বলিষ্ট নেতৃত্বের মাধ্যমে এলডিপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে একত্রিত করে রাজপথে ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগের একদফা আন্দোলন ত্বরানিত করেছেন। যা দেশ- বিদেশি গণমাধ্যমের নিউজ গুলো প্রমাণিত।
তিনি সবসময় জ্ঞান পিপাসু যার কারণে ষাটোর্ধ বয়সে দীর্ঘ পাঁচ বছর লন্ডনের অক্সফোর্ড ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয় হতে লেখাপড়া করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন । তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় বছর ফেলো ছিলেন। যা একজন রাজনীতিবিদদের জন্য অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ড.কর্নেল অলি আহমদ বীরবিক্রমকে খুবই প্রয়োজন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য।দেশের জন্য,জনগণের জন্য এই মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে নজির হয়ে থাকবে।
মহান এই নেতা ১৯৩৯ সালে ১৩ মার্চে জন্ম গ্রহন করেন। তার ৮৬তম শুভ জন্মদিন হোক ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার শুভদিন।আল্লাহ এই বীরকে দীর্ঘায়ুদান করুন।
অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান
উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ( অতিরিক্ত দায়িত্ব দফতর)
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি