অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করার আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। শুক্রবার উত্থাপিত এ প্রস্তাবে ইসরাইলের কাছে সব ধরনের অস্ত্র বিক্রি বন্ধেরও দাবি জানানো হয়েছে। খবর আলজাজিরা, রয়টার্স, এপির।
ওআইসির পক্ষে ৪৭ সদস্যের মানবাধিকার কাউন্সিলে প্রস্তাবটি পেশ করে পাকিস্তান। এ প্রস্তাবের পক্ষে ২৮টি দেশ এবং বিপক্ষে ছয়টি দেশ ভোট দিয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল ১৩টি দেশ।
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে : বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, বুরুন্ডি, চিলি, চীন, কোট ডি আইভরি (আইভরিকোস্ট), কিউবা, ইরিত্রিয়া, ফিনল্যান্ড, গাম্বিয়া, ঘানা, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, কাতার, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভিয়েতনাম।
প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে : আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া, জার্মানি, মালাউই, প্যারাগুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্র।
আর প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকা দেশগুলো হচ্ছে : আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, ক্যামেরুন, কোস্টারিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, জর্জিয়া, ভারত, জাপান, লিথুয়ানিয়া, মন্টিনিগ্রো, নেদারল্যান্ডস ও রোমানিয়া।
প্রস্তাবে ‘দায়মুক্তির অবসানের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’
জেনেভায় ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত মেরাভ ইলন শাহার এই প্রস্তাবকে মানবাধিকার কাউন্সিল ও জাতিসংঘের জন্য একটি ক্ষত বলে নিন্দা করেছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এই প্রস্তাব পাশ হলেও তা মানতে কোনো দেশ বাধ্য নয়। তবে এ ধরনের প্রস্তাব ইসরাইলের ওপর কূটনৈতিক চাপ আরও জোরদার করবে।
নেতানিয়াহুকে মার্কিন নীতি পরিবর্তনের হুমকি: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বেসামরিক জনগণকে রক্ষা করতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র নীতি পরিবর্তন করবে বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপের সময় তিনি এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
দুই নেতার প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী ফোনকল সম্পর্কে এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ বলেছে, ‘বেসামরিকদের ক্ষতি, মানবিক দুর্ভোগ এবং সাহায্যকর্মীদের নিরাপত্তা রক্ষায় ইসরাইলকে সুনির্দিষ্ট এবং বাস্তবিক পদক্ষেপের ঘোষণা দেওয়া এবং সেগুলো বাস্তবায়নে’র প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করেছেন বাইডেন। হোয়াইট হাউজ আরও জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে ইসরাইলের নেওয়া তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের বিষয়ে আমাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে গাজার জন্য মার্কিন নীতি নির্ধারণ করা হবে।’
সোমবার ইসরাইলের হামলায় সেলিব্রিটি শেফ জোসে আন্দ্রেসের দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) গ্র“পের সাত কর্মী নিহত হন। সাত ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার পরই তাদের এ ফোনালাপ হলো।
এদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পর ইসরাইলকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তিনি বলেছেন, গাজায় যদি শিগগির শান্তি ফিরে না আসে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে ইসরাইল। সেই সঙ্গে তিনি গাজায় হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ নিহতের ঘটনায় প্রথমবারের মতো ইসরাইলের সমালোচনাও করেছেন। বৃহস্পতিবার একটি রেডিওতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরাইলের সরকারকে আমি খুবই সহজ এবং সংক্ষিপ্ত একটি বার্তা দিতে চাই-দ্রুত যুদ্ধ শেষ করুন, শান্তি ফিরিয়ে আনুন এবং মানুষ হত্যা বন্ধ করুন।’ তিনি বলেন, ‘হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আমিও সমর্থন করি, কিন্তু ইসরাইল যেভাবে এই যুদ্ধ করছে-সেটি আমার পছন্দ নয়।’