বেফাঁস কথাবার্তা, প্রতিপক্ষের ওপর সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলেছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ। এবার আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ও হাইকমান্ড সম্পর্কে তার বিরূপ মন্তব্যে তোলপাড় চলছে।
১৩ মার্চ বাগমারায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্সে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সদ্য নির্বাচিত এমপি আবুল কালাম আজাদ।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রীও কিন্তু চান সব সময় সবলের পক্ষে থাকতে। আমরা যারা সবল বা মেজরিটি- তারা যেদিকে যাব সেটাই আইন। শেখ হাসিনাও এই যে গত নির্বাচন করলেন এটা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলে না। গঠনতন্ত্রের বাইরেও অনেক কিছু প্রয়োজন। প্রয়োজনতন্ত্র আছে একটা। এই প্রয়োজনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী সম্মেলন হওয়া পর্যন্ত চলব আমরা।’ তার এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আবুলের সঞ্চালনায় ওই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন, জাকিরুল ইসলাম সান্টুসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এমপি আবুল কালাম আজাদ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বাগমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘দলের প্রধান এবং দলীয় গঠনতন্ত্র সম্পর্কে এমপি কালামের বক্তব্য চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ। এমন বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ার তার নেই।’
তিনি বলেন, ‘কালাম অগঠনতান্ত্রিকভাবে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেছেন। তিনি এটা করতে পারেন না। এসব বিষয় আমরা দলের হাইকমান্ডকে অবগত করেছি। আশা করছি, অচিরেই হাইকমান্ড তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’
বক্তব্যের জন্য এমপি আবুল কালামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ১৩ মার্চের সভায় উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু বলেন, ‘এমপি আবুল কালাম আজাদ এ ধরনের কথা বলেছেন কিনা আমি বুঝতে পারিনি।’ আপনি তো এমপির পাশেই বসে ছিলেন- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি হয় তো তখন অ্যাবসেন্ট মাইন্ডেড ছিলাম।’
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কালামের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতার অভিযোগে ওঠে। স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুলের সমর্থকদের মারধর এবং এলাকা ছাড়া করেন কালাম। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং সহিংসতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে নির্বাচন কমিশন। ২৩ ফেব্রুয়ারি বাগমারার একডালা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এমপি কালামের সংবর্ধনায় জামায়াত-শিবিরের সাবেক ক্যাডার এবং বাংলা ভাইয়ের অন্যতম সহযোগী আব্দুল হালিম অংশগ্রহণ করলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়।