ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের চাপ তত বাড়ছে। ইতোমধ্যে রেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। তবে সড়ক, নৌ, আকাশপথেও ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকায় এবার অনেকে আগেভাগে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। যারা আগে যাচ্ছেন তাদের ভোগান্তিও কম হচ্ছে।
ঈদ সামনে রেখে ট্রেনে যাত্রীর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। ট্রেনে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে গ্রামের উদ্দেশে রাজধানী ছেড়ে গেছে অসংখ্য মানুষ। সকাল থেকে প্রায় সব ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে। দ্বিতীয় দিনে ট্রেনে চলাচলে যাত্রীদের কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। কর্তৃপক্ষ বলছেন টিকিট ছাড়া কাউকে প্লাটফর্মে ঢুকতে না দেওয়ায় যাত্রীরা নির্বিঘ্নে সবকিছু করতে পারছেন। যাত্রীরা ট্রেনের ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করছেন। দ্বিতীয় দিন ট্রেন ছাড়তে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট দেরি হয়েছে। বিনা টিকিটের যাত্রীর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবার রেল কর্তৃপক্ষের তৎপরতার কারণে রেলে যাত্রা নির্বিঘ্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন যাত্রী।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী, সায়েবাদ বাস টার্মিনালে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের চাপ বেড়েছে। পাশাপাশি শ্যামলী, টেকনিক্যাল, পান্থপথ, আরামবাগ হয়ে বিভিন্ন পরিবহণের কাউন্টার থেকেও মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন।
যাত্রীদের অভিযোগ, সাধারণ সময়ের চেয়ে বাসের টিকিটে অতিরিক্ত ভাড়া রাখা হচ্ছে। এসি বাসে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা এবং ননএসি বাসে ১০০টা থেকে ১৫০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। এসব নিয়ে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের কথা, সরকার ঘোষণা করেছে কিলোমিটারে ৩০ পয়সা ভাড়া কমেছে। অথচ বাসের টিকিটে বেশি ভাড়া রাখা হচ্ছে। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেদিকে কোনো খেয়াল রাখছেন না।
আজ শুক্রবার থেকে যুক্ত হচ্ছে ১৬টি বিশেষ ট্রেন: চলমনান ১০৯টি আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে আরও ১৬টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে আজ শুক্রবার থেকে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে রেল। বৃহস্পতিবার ঈদ যাত্রার দ্বিতীয় দিন ভ্রমণ করেছে ২৫ মার্চে অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার যুগান্তরকে বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে। আশা করি এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। শেষ মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও পোশাক কারখানা ছুটি হলে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাবে সেদিকে লক্ষ রেখে শুক্রবার থেকে সারা দেশে আট জোড়া বা ১৬টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।
ঈদের আগে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ কীভাবে সামাল দেওয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের স্টেশনের গেটে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। টিকিটের বাইরে কাউকেই আমরা প্রবেশ করতে দেব না। জনস্রোত সামাল দেওয়ার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নোটিশ করেছি। আমরা যেহেতু নিরস্ত্র তারা আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।
তিনি আরও বলেন, হঠাৎ রেলের ইঞ্জিনে সমস্যা হলে আমাদের অতিরিক্ত ইঞ্জিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত লোকোমোটিভও রয়েছে। আশা করছি শেষ মুহূর্তে নির্ঝঞ্ঝাট ঈদযাত্রা উপহার দিতে পারব।
সারা দেশে রেলস্টেশনগুলোর পরিস্থিতি জানিয়ে স্টেশন ম্যানেজার বলেন, মোবাইল কোর্টে সার্বক্ষণিক মনিটরিং চলছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্টেশনগুলোর খোঁজখবর রাখছেন। তবে এখন ঝড়-বৃষ্টি চলে। প্রায়ই রেললাইনের ওপর গাছ পড়ে থাকে। এসব পরিস্থিতি তো আমাদের হাতে থাকে না।
জানা গেছে, আট জোড়া বা ১৬টি বিশেষ ট্রেন চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (১ ও ৩) চট্টগ্রাম-চাঁদপুর; চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (২ ও ৪) চাঁদপুর-চট্টগ্রাম; ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (৫ ও ৬) চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (৭ ও ৮) ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে ৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এবং ঈদের পরে পাঁচ দিন চালানো হবে। এছাড়াও কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল (৯ ও ১০) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ঈদের আগে (৮ ও ৯) এপ্রিল ও ঈদের পরের দিন থেকে তিন দিন চলাচল করবে।